(বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক)
প্রায় চল্লিশ বছর আগেকার কথা। অশোক ঘোষের পর আইএফএ-র সচিব হয়ে এলেন এরিয়ানের অশোক মিত্র। অনেকে বলতে শুরু করলেন, যাক, এম দত্তরায়ের পর এমন একজন দায়িত্ব পেলেন, যিনি নিজে ফার্স্ট ডিভিশন ফুটবল খেলেছেন। অশোক মিত্র উত্তর কলকাতার বনেদি পরিবারের সন্তান, ভালমানুষ। এতটাই কাছের, যখন-তখন তাঁর চেম্বারে ঢোকা যায়। কিন্তু খুব অল্প দিনের মধ্যেই আমরা বুঝতে পেরে গেলাম, এরিয়ান ক্লাব সামলানো যতটা সহজ, আইএফএ ততটা নয়। ময়দানে রাজনীতির আবর্তে পড়ে অশোক মিত্র হাঁসফাঁস করতে লাগলেন। যেন অব্যাহতি পেলে তিনি বেঁচে যাবেন।
জল্পনা শুরু হল, কী চান ময়দানের কিং মেকার বিশ্বনাথ দত্ত? কে হতে পারেন, তাঁর মনোনীত প্রার্থী? কে-ই বা এমন আছেন, যাঁকে তিন বড় ক্লাব মেনে নেবে? অথবা যিনি তিন বড় ক্লাবের সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারবেন? জগমোহন ডালমিয়া প্রথম পছন্দ হতে পারতেন। কিন্তু তিনি সুতারকিন স্ট্রিটের থেকে অনেক বেশি প্রাধান্য দিচ্ছিলেন ইডেন গার্ডেন্সকে। হঠাৎ রটে গেল, বিশ্বনাথ দত্ত চান বা না চান, আইএফএ-তে নির্বাচন হবেই। তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রদ্যুত দত্ত। জর্জ টেলিগ্রাফ ক্লাবের কর্তা। চিনতে পারলাম, ভদ্রলোক ‘খেলার কথা’ বলে একটা ম্যাগাজিন চালাতেন। তখনও জানতাম না, উনি বিশ্বনাথ দত্তের আপন ছোটভাই।
সেবার আইএফএ-র নির্বাচনের দিন, কার মুখে যেন শুনলাম, জর্জ টেলিগ্রাফ ক্লাব তাঁবূতে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। আদিত্য বলে একজন বোমা তৈরি করার সময় মারা গেছে। হার-জিত নিয়ে গড়ের মাঠে ভাঙচুর, মারপিট, বোতল ছোড়াছুড়ির অনেক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু বোমা বিস্ফোরণে ক্লাবকর্মীর মৃত্যু, অভূতপূর্ব। অফিসে ফিরে শুনলাম, আইএফএ-র নতুন সচিব হয়েছেন প্রদ্যুত দত্ত। দু’চারদিন পর পরিচয় হতেই বুঝতে পারলাম, একগুঁয়ে মানুষ। এম দত্তরায়-কে অনেকে বেচুদা বলে ডাকতেন। বিশ্বনাথ দত্তকে বিশুদা। অশোক ঘোষ ছিলেন অশোকদা, অশোক মিত্তির নন্তুদা। কিন্তু প্রদ্যুত দত্ত আলাদা টাইপের। ওঁকে ‘দুলুদা’ বলা যাবে না। উনি প্রদ্যুতবাবু হয়েই থাকতে চান।
খুব শিগগির আমার ভুল ভেঙে গেল। ওই সময় ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচের টিকিটের প্রচণ্ড চাহিদা হত। সচিব হওয়ার পর প্রদ্যুতবাবুর আমলে প্রথম বড় ম্যাচ। লোক মারফত উনি আমার কাছে কিছু টিকিট পাঠিয়ে দিলেন। আমি টিকিট না-চাওয়া সত্ত্বেও। সত্যি বলতে কী, সাংবাদিকদের বশে রাখার এই উদ্যোগটা তখন আমার পছন্দ হয়নি। ওটা ইডেনের ক্লাব হাউস থেকে উদ্ভূত ক্রিকেটীয় সংস্কৃতি বলে আমার মনে হত। আইএফএ অফিসে গিয়ে টিকিটগুলো আমি নিজে ফেরত দিয়েছিলাম। প্রদ্যুতবাবুকে খুব বিনয়ের সঙ্গে বলেছিলাম, ‘আমার পরিবারের কেউ খেলা দেখে না। আপনাকে দল চালাতে হয়, টিকিটগুলো রেখে দিন। আপনার কাজে লাগবে।’ ওই একটি ঘটনাতেই পরস্পর পরস্পরকে বুঝে গেছিলাম আমরা। প্রায় এক দশকের সম্পর্কটা টিকে ছিল ওই মূল্যবোধের উপরই।
পাঁচটা ডিভিশনে অন্তত শ’দুয়েক ক্লাব। সিজনে হাজারেরও বেশি ম্যাচ। কলকাতার ফুটবলে তখন ভরা কোটাল। ট্রফির পর ট্রফি আনছে বড় ক্লাব। এই পরিস্থিতিতে হাল ধরেছিলেন প্রদ্যুতবাবু। আইএফএ অফিস ফুটবল মরশুমে তখন গমগম করত। মধ্যমণি হয়ে বিরাজ করতেন প্রদ্যুতবাবু। পরনে সাদা শার্ট ও ট্রাউজার্স। একটু খুঁড়িয়ে হাঁটতেন। শুনেছিলাম, অল্প বয়সে ময়দানে খেলা দেখতে গিয়ে তিনি ট্রাম দুর্ঘটনায় পড়েন। ডান পায়ের কিছু অংশ বাদ চলে যাওয়ায় কৃত্রিম পা লাগাতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাতে আইএফএ চালাতে কোনও অসুবিধা হয়নি। লিডারশিপের গুণে অন্যদের তিনি দৌড় করাতেন। খুব অল্পদিনের মধ্যেই আমার মনে হয়েছিল, ভদ্রলোক কিছু করতে চান। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে আখেরে ফুটবলেরই উন্নতি হবে।
পাঁচটা ডিভিশনে অন্তত শ’দুয়েক ক্লাব। সিজনে হাজারেরও বেশি ম্যাচ। কলকাতার ফুটবলে তখন ভরা কোটাল। ট্রফির পর ট্রফি আনছে বড় ক্লাব। এই পরিস্থিতিতে হাল ধরেছিলেন প্রদ্যুতবাবু। আইএফএ অফিস ফুটবল মরশুমে তখন গমগম করত। মধ্যমণি হয়ে বিরাজ করতেন প্রদ্যুতবাবু। পরনে সাদা শার্ট ও ট্রাউজার্স। একটু খুঁড়িয়ে হাঁটতেন। শুনেছিলাম, অল্প বয়সে ময়দানে খেলা দেখতে গিয়ে তিনি ট্রাম দুর্ঘটনায় পড়েন। ডান পায়ের কিছু অংশ বাদ চলে যাওয়ায় কৃত্রিম পা লাগাতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাতে আইএফএ চালাতে কোনও অসুবিধা হয়নি। লিডারশিপের গুণে অন্যদের তিনি দৌড় করাতেন। খুব অল্পদিনের মধ্যেই আমার মনে হয়েছিল, ভদ্রলোক কিছু করতে চান। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে আখেরে ফুটবলেরই উন্নতি হবে।
প্রদ্যুতবাবু যখন দক্ষিণ কলকাতার অপূর্ব মিত্র লেনের ভাড়া বাড়িতে থাকতেন, তখন ফুটবলার, সাংবাদিক, ক্লাবকর্তা সবার জন্য অবারিত দ্বার সেখানে। ছুটির দিন সেই ফুটবল আড্ডায় প্রায়ই যেতাম। উনি ধৈর্য ধরে আমাদের কথা শুনতেন। সুইডেনে ইউরো কাপ খেলা কভার করতে গিয়ে দেখেছিলাম, ওখানে বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট খুব জনপ্রিয়। আট-দশ বছর বয়সিদের জন্যও ওখানে লিগ আছে। আড্ডায় একদিন আলোচনা হচ্ছিল, কলকাতায় নার্সারি লিগ চালু করলে কেমন হয়। কেউ পরামর্শ দিয়েছিলেন, মেয়েদের লিগেরও। কলকাতার নানা প্রান্তে তখন ছোটদের ফুটবল ক্যাম্প চলত। মূলত আন্ডার হাইটের টুর্নামেন্টেই সীমাবদ্ধ ছিল তাদের খেলা। ফুটবলারদের সাপ্লাই লাইনটা যাতে ঠিক থাকে, সেই কারণে প্রদ্যুতবাবু পরের বছরই শুরু করে দিয়েছিলেন নার্সারি ডিভিশন।
কলকাতার ফুটবলে প্রদ্যুতবাবুর সবথেকে বড় অবদান, স্পনসরশিপ সম্পর্কে ভুল ভেঙে দেওয়া। একবার ঢাকায় প্রেসিডেন্টস কাপ ফুটবল কভার করতে গিয়ে দেখেছিলাম, ওখানকার ক্লাবগুলো জার্সিতে স্পনসর কোম্পানির লোগো ব্যবহার করছে। কলকাতায় তখনও পর্যন্ত ধারণা ছিল, অপেশাদার কাঠামোয় ক্লাব এইভাবে অর্থসংগ্রহ করতে পারে না। আনন্দবাজার পত্রিকায় লোগো ব্যবহার নিয়ে একটা রিপোর্ট লিখেছিলাম। সেইসময় আইএফএ-র প্রেসিডেন্ট বিচারপতি অজিত সেনগুপ্ত। আমি কলকাতায় ফেরার পর উনি আমাকে ডেকে জানতে চাইলেন, কাগজে যা লিখেছি ঠিক কি না? সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ওঁকে সেদিন আমি ফিফার মিডিয়া ইনচার্জের ইমেল ঠিকানাটা দিয়েছিলাম। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ফিফা থেকে প্রদ্যুতবাবুর কাছে উত্তর এসেছিল। ফিফা বলেছিল ফুটবল চালিয়ে যাওয়ার জন্য ক্লাব অবশ্যই স্পনসর নিতে পারে। আর্থিক অনটনে ধুঁকতে থাকা ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান বেঁচে গেছিল তার পর থেকে।
সংস্কারকদের চলার পথে সবসময়েই কাঁটা বিছানো থাকে। প্রদ্যুতবাবুকেও হাঁটতে হয়েছে তার উপর দিয়ে। অনেকের অপছন্দের কারণ হয়ে গেছিলেন তিনি। অশোক ঘোষ অনেকের দাদাগিরি সহ্য করেছিলেন বামফ্রন্টের আমলে। শুনেছি, তাঁর হাজার বিঘে ভেড়ি রাতারাতি লুঠ হয়ে গেছিল সেই সময়। ‘মাই ডিয়ার’ হতে গিয়ে নিজের সর্বনাশটি ডেকে এনেছিলেন অশোকদা। প্রদ্যুতবাবু কিন্তু কারও বশংবদ হয়ে থাকতে চাননি। এমনিতেই খানিকটা বামবিরোধী মনোভাবের ছিলেন। ফলে একটা সময় বিরাগভাজন হয়ে গেছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর। দফায় দফায় বড় ম্যাচ আয়োজন করা নিয়ে সমস্যা, টিকিটের দাম বাড়ানো নিয়ে মনোমালিন্য। একবার রাইটার্স বিল্ডিংসের রোটান্ডায় সুভাষবাবুর সঙ্গে মিটিং করতে গিয়ে মেজাজ দেখিয়ে চলে এলেন প্রদ্যুতবাবু। সেই মিটিং কভার করতে আমিও গেছিলাম। কেন জানি না, সেদিন মনে হয়েছিল, প্রদ্যুতবাবু ঠিক করলেন না। পরে অনেক ঘটনায় বুঝতে পারি, দু’জনের মধ্যে সম্পর্কটা বাইরে থেকে তেতো মনে হলেও, আসলে মধুর।
প্লেয়ারদের কখনও মাথায় চড়তে দেননি প্রদ্যুত দত্ত। আবার কখনও প্রতিহিংসাপরায়ণ হতেও দেখিনি। দু’টি ঘটনার কথা মনে পড়ছে। একবার সবুজ-মেরুনের শিশির ঘোষের সঙ্গে মারপিটের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে লাল-হলুদের চিমা ওকোরি সাসপেন্ড হয়ে গেলেন। আরেকবার রেফারি প্রদীপ নাগকে আক্রমণ করে সুব্রত ভট্টাচার্য শাস্তির কবলে। দু’জনেই ক্রাউড পুলার। মাঠে দর্শকসংখ্যা কমে যেতে থাকায় আমরাই প্রদ্যুতবাবুকে বোঝালাম, মাথা গরম করে প্লেয়াররা অপরাধ করে ফেলেছে। মাঠে দর্শক ফিরিয়ে আনার জন্য ওঁদের শাস্তি কমিয়ে দেওয়া হোক। প্রদ্যুতবাবু আমাদের অনুরোধ রেখেছিলেন। ওঁর দূরদর্শিতা নিয়ে আমার মনে কখনও কোনও সন্দেহ জাগেনি। সবসময় দেখেছি, রেফারিদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ইচ্ছে করলে, সচিব হিসেবে নিজের ক্লাব জর্জ টেলিগ্রাফের জন্য অনেক সুযোগ সুবিধা নিতে পারতেন। কিন্তু কখনও কোনও অনৈতিক কাজে ক্লাবকে জড়াতে দেননি। শুনেছি, একবার জর্জের বিরুদ্ধে গটআপ ম্যাচ খেলার অভিযোগ শুনে তিনি মারাত্মক চটে গেছিলেন। টিমের ভারপ্রাপ্ত কর্তাকে তিনি পেপারওয়েট ছুড়ে মেরেছিলেন।
প্রদ্যুতবাবু দাদাগিরি করতেন বলে আমার মনে হত না। তবে স্পষ্ট বুঝতে পারতাম, কারও দাদাগিরি সহ্য করার মানুষ তিনি নন। কেউ হয়তো ওঁর মাথায় ঢুকিয়েছিলেন, অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচনে নেমে পড়ুন। খলিফা জিয়াউদ্দিনের সমর্থন পাবেন। তখন এআইএফএফ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি। তিনি এআইএফএফের প্রেসিডেন্ট হতে ইচ্ছুক। আমরা শুনলাম, প্রিয়বাবুর বিরুদ্ধে প্রদ্যুতবাবু নির্বাচনে লড়বেন আরেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষমোহন দেবকে সামনে রেখে। দুই হেভিওয়েট মন্ত্রীর লড়াই। নির্বাচন স্থল মুম্বই। কার থেকে আশ্বাস পেয়েছিলেন জানি না, প্রদ্যুতবাবু আমাদের ধারণা দিয়েছিলেন, হারার কোনও প্রশ্নই নেই। দলবল নিয়ে তিনি গিয়ে উঠলেন তাজ হোটেলে। কিন্তু তাঁর হিসেবে ভুল হয়েছিল। নির্বাচনের আগের রাতে আমরা হঠাৎ শুনলাম, সন্তোষমোহন দেব নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী না কি চাননি, তাঁর ক্যাবিনেটের দুই মন্ত্রী পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়ুন।
মুম্বইয়ের ওই নির্বাচনের আগে আমি আনন্দবাজারে একটা প্রবন্ধ লিখেছিলাম, প্রদ্যুতবাবুর এআইএফএফ সচিব হওয়ার সম্ভাবনা আছে। লেখার ভিতরে একটা কার্টুন আঁকা ছিল, প্রদ্যুতবাবুর ট্যাকলে প্রিয় দাসমুন্সি ধরাশায়ী হয়ে গেছেন। ওই কার্টুনটার জন্য আমাকে পরে অনেক কথা শুনতে হয়েছিল। তখন ভেবে আমি অবাক হয়ে গেছিলাম, কার ভরসায় প্রদ্যুতবাবু লড়তে গেছিলেন? সর্বভারতীয় স্তরে মাত্র চার বছরের অভিজ্ঞতা। কোন কোন কর্তা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন ওঁর সঙ্গে? শিলিগুড়িতে নেহরু কাপ ফুটবলের আয়োজন করতে যাওয়া আরেকটা ভুল হয়েছিল। এবার অসহযোগিতা করেছিলেন সুভাষ চক্রবর্তী।
জেলা শহরে কাপ ফুটবল আয়োজন করার পিছনে প্রদ্যুতবাবুর একটাই উদ্দেশ্য ছিল। এই সুযোগে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে উত্তরবঙ্গে একটা স্টেডিয়াম তৈরি করে ফেলা। কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম হওয়ার সময় সুভাষবাবু নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শিলিগুড়ির ব্যবসায়ী সমিতি থেকে আর্থিক সাহায্যের। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগে প্রদ্যুতবাবুর একটা বিতর্কিত সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হল উত্তরবঙ্গ সংবাদে। তাতে না কি সুভাষবাবুর সমালোচনা করেছিলেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি পড়ে সেইসময় আমার মনে হয়েছিল, প্রদ্যুতবাবু ওইরকম স্থুল কথা বলতেই পারেন না। সুভাষবাবু দাবি করেছিলেন, তা হলে রিজয়য়েন্ডার দিন। কিন্তু প্রদ্যুতবাবু তাতে রাজি হননি। যে রিপোর্টার সাক্ষাৎকার নিয়েছিল, সে না কি কান্নাকাটি করেছিল, প্রতিবাদপত্র দিলে তাঁর চাকরি চলে যাবে। অর্বাচীন সেই রিপোর্টারকে বাঁচানোর জন্য প্রদ্যুতবাবু কেন যে নিজের এবং আইএফএ-র সর্বনাশ ডেকে এনেছিলেন, কে জানে?
সুভাষবাবু কোনও সাহায্য করেননি। মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছিল আইএফএ। প্রায় তিরিশ লাখ টাকার মতো। দেনার দায়ে আইএফএ-তে আসা কমিয়ে দিয়েছিলেন প্রদ্যুতবাবু। শেষে একটা সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপর দিল্লির হাসপাতালে মারা যান। প্রায় তিরিশ বছর কেটে গেছে। এখনও ভাবার চেষ্টা করি, ফেডারেশনের সেই নির্বাচনে যদি প্রদ্যুতবাবু জিততেন, তা হলে কী হতে পারত? সর্বভারতীয় টুর্নামেন্টগুলো (ডুরান্ড, রোভার্স, আইএফএ শিল্ড, বরদলুই ট্রফি, স্ট্যাফোর্ড কাপ, কলিঙ্গ কাপ, বান্দোদকর কাপ) উঠে যেত না। আই লিগ নমঃ নমঃ করে শুরু হত না। অনেক বেশি রাজ্যের ক্লাব টিম জাতীয় লিগে অংশ নিত। প্রিয় দাসমুন্সির মতো, ললিত মোদিকে প্রদ্যোতবাবু ফিরিয়ে দিতেন না। ক্রিকেটের আইপিএলের বদলে অনেক জাঁকজমক করে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ হত। ফুটবলের প্রসারের জন্য ফিফা যে বিরাট পরিমাণের অনুদান দিত, তার সদ্ব্যবহার হত। ক্রিকেটের কাছে ফুটবল কৌলীন্য হারাত না।